সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম:
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের বহুল আলোচিত পিতা ও পরিবারের লোকজনের হাতে সম্প্রতি শিশু তুহিন হত্যকান্ডের পর এবার প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৭০ বছরের বয়োবৃদ্ধ নানা রোগে শয্যাশায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে ও শাবলের আঘাতে হত্যাকান্ডের অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী এবং ছেলের বিরুদ্ধে। নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম মো. আবদুল বারিক। তিনি জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার মৃত মুসলিম উদ্দিনের ছেলে।
সোমবার এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধার প্রথম স্ত্রী আছিয়া খাতুন ও তার ছেলে মিলনকে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠিয়েছেন থানা পুলিশ।
সোমবার সন্ধায় সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমানের (বিপিএম) নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, মামলা ও সন্ধিগ্ন আসামী হিসাবেই নিহতের স্ত্রী এবং এক ছেলেকে আটকের পর আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার সুত্রে জানা যায়, মামলা মোকদ্দমা ও পুর্ব বিরোধের জেল ধরে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষদ্বয়কে ফাঁসাতে দোয়ারাবাজারের সুলতানপুর গ্রামের বার্ধক্যজনিক জনিত নানারোগে শয্যাশায়ী বয়োবৃদ্ধ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারিককে তারই প্রথম স্ত্রী আছিয়া বেগম রবিবার বেলা ১০টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রথমে পিটিয়ে ও পরে মাথায় লোহার শাবল দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যাকান্ডে তাকে সহায়তা করে তারই ছেলে মিলন।
পরবর্তীতে প্রতিপক্ষের দ্বারা সৃষ্ট সংঘর্ষে আহত হয়েছে এ অজুহাত তৈরী করে নিহত আবদুল বারিককে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পুর্বেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
এলাকাবাসীর দেয়া তথ্যের আলোকে দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যকান্ডের রহস্য উদঘাটনে নিহতের প্রথম স্ত্রী ও তাদের এক ছেলেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
পরবর্তীতে নিহতের লাশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী শেষে সন্ধ্যায় ময়না তদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ একই সাথে নিহতের বসতবাড়ির পাশে ছালার (চট) বস্তা দিয়ে মোড়ানো রক্তমাখা লোহার শাবল জব্দ করেন।
এ ঘটনায় রবিবার রাতে নিহত আবদুল বারিকের দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে ভ্যানচালক সুমন মিয়া বাদী হয়ে বড় মা (সৎ মা) আছিয়া বেগম ও তার ছেলে মিলনকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এলাকাবাসী, প্রতিবেশী ও থানা পুলিশের সাথে এ প্রসঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, জেলার দোয়ারাবাজারের লক্ষীপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারিকের প্রথম স্ত্রী আছিয়া খাতুন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে তিনি কয়েক বছর আগে তালাক দিয়েছেন।
নানা রোগে শয্যাশায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বারিক ও স্ত্রীর আছিয়ার মধ্যে সম্প্রতি পারিবারিক কলহও বিরোধ চলে আসছিলো।
রবিবার সকালে কলহের জের ধরে স্ত্রী আছিয়া খাতুন স্বামীকে বসত ঘরেই প্রথমে পিটিয়ে ও পরে লোহার সাবল দিয়ে মাথায় উপর্যুপুরি আঘাত করেন। এতে বসত ঘরেই আবদুল বারিক নির্মমভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এরপর আছিয়া বেগম ও তার ছেলে এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের জন্য আবদুল বারিক হত্যাকান্ডকে প্রতিপেক্ষর উপর দায় চাপিয়ে প্রতিশোধ নিতে সংঘর্ষের নাটক সাজান।
কিন্তু গ্রামে থাকা প্রতিবেশী ও নিহতের স্বজনরা এ গোমড় ফাঁস করে দিয়ে থানা পুলিশকে জানিয়েছেন, গ্রামের কালা শাহের সঙ্গে আবদুল বারিকের মামলা মোকদ্দমা সংক্রান্ত পুর্ব থেকেই বিরোধ রয়েছে। এ ঘটনায় নিহত বারিক ও আছিয়া দম্পতির এক ছেলে সাবাজ জেলা কারাগারে রয়েছেন।
তাই প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেও স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করতে পারেন বলে গ্রামের প্রতিবেশী, নিহতের স্বজন এলাকার অনেকেই পুলিশকে অবহিত করেন।
সোমবার সন্ধায় দোয়ারাবাজার থানার ওসি মো. আবুল হাসেম এ প্রতিবেদকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নিহতের স্ত্রী ও ছেলে হত্যার দায় স্বীকার করেননি। আপাতত ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ঘটনার মুল রহস্য উদঘাটনে সোমবার আসামীদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানিয়েছি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জেলার দিরাইয়ে প্রতিপক্ষেকে ফাঁসাতে নিজ পিতা ও পরিবারের লোকজনের হাতে বর্বরভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হন ছয় বছরের শিশু তুহিন। এর দিন কয়েক পরেই প্রথম স্ত্রীকে ফাঁসাতে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্ররোচনায় সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পিরোজপুর গ্রামের আজিজুর রহমান ওরফে হেকমত আলী নামের আরেক গুণধর পিতা নিজের ৯ বছরের শিশু সন্তান রিমন মিয়াকে লুকিয়ে রেখে অপহরণ নাটক সাঁজাতে গিয়ে উল্টো জেলা কারাগারে নিজের ঠাঁই করে নিলেন।